কিয়ামতের দিন আরশের নিচে যারা পাবেন স্থান।

আমরা মুসলিম সম্প্রদায়। পরকালে বিশ্বাসী। দুনিয়া ত্যাগ করার পরই ইহকাল শুরু হবে এটা বিশ্বাস রাখি। অর্থাৎ কবরের জিন্দেগী দ্বারা ইহকালের পরম সূচনা হবে। দুনিয়ার জীবন যদি নেক আমল দিয়ে সাজিয়ে যেতে পারি তাহলে কবরের জিন্দেগী হবে সুখ-শান্তিময়। জান্নাতের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হবে আমাদের কবর। অন্যথায় ভয়ঙ্কর শাস্তি দ্বারাই শুরু হবে আমাদের ইহকালের যাত্রা। জাহান্নামের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হবে আমাদের কবর। এতো গেল প্রথম ধাপের অতি অল্প কথা।

দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে কবরের জিন্দেগী পরিসমাপ্ত হয়ে কেয়ামতের দিন কায়েম হবে। কিন্তু বিচার ব্যবস্থা শুরু হওয়ার পূর্বে আমাদের কিছুসময় কঠিন মুসিবতে পার করতে হবে। সেই কঠিন পরিস্থিতির সামান্য একটি উদাহরণ হচ্ছে, বর্তমানে সূর্য আর আমাদের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে প্রায় নয়শত মাইলের ব্যবধান। তারপরও যখন গরমের দিন সূর্যের তাপমাত্রা একটু বেড়ে যায়। আমাদের অবস্থা নাজুক হয়ে পরে। কখনো কখনো তো সহ্যের বাহিরেও চলে যায়। অথচ হাদিসে শরীফে এসেছে.. কিয়ামতের দিন সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সূর্য আমাদের মাথার মাত্র অর্ধহাত উপরে অবস্থান করবে। ভেবে দেখেছেন! তখন আমাদের অবস্থা কেমন হতে পারে? কিয়ামতের দিনের কঠিন পরিস্থিতির কথা বর্ননা করতে গিয়ে আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ۚ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱﴾ یَوۡمَ تَرَوۡنَہَا تَذۡہَلُ کُلُّ مُرۡضِعَۃٍ عَمَّاۤ اَرۡضَعَتۡ وَ تَضَعُ کُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَہَا وَ تَرَی النَّاسَ سُکٰرٰی وَ مَا ہُمۡ بِسُکٰرٰی وَ لٰکِنَّ عَذَابَ اللّٰہِ شَدِیۡدٌ ﴿۲﴾
অর্থাৎঃ "হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের দিন ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। সেদিন তোমরা দেখবে স্তন্য দানকারিনী মা তার আপন দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে ভুলে যাবে। এবং গর্ভধারিণী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে অথচ সে বুঝতেই পারবে না। এবং তোমরা দেখবে মানুষকে পাগলের মতো আচরণ করতে কিন্তু তারা পাগল নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন"।

(সুরা হজ্জ ১,২) এই দুটি আয়াত থেকেই প্রতীয়মান হয় সেদিনের অবস্থা কেমন ভয়াবহ হবে।

তবে কিছু মানুষের জন্য সুসংবাদ আছে। তাদের জন্য সেই সময়টা খুব আরাম আয়েশেই কাটবে। এক মনোমুগ্ধকর, হৃদয়প্রশান্তকর জায়গায় তারা আশ্রয় পাবে। হাদিস শরীফে রাসুল (সাঃ) বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:« سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله تَعَالَى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ. (مُتَّفَقٌ عَلَيهِ)

অর্থাৎঃ যেদিন আরশের ছায়া ব্যতীত অন্যকোনো ছায়া থাকবেনা। সেদিন শুধুমাত্র সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে ছায়া পাবে।

(এক) ইনসাফগার শাসক অর্থাৎ এমন বাদশাহ বা রাস্ট্রপ্রধান যিনি ইসলামী হুকুমতের সাথে ন্যায়পরায়ণতার সহিত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।

(দুই) এমন ব্যক্তি যার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে কেটেছে। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ যৌবনকালেই আল্লাহর নাফরমানীতে বেশি মশগুল হয়ে পরে, ইবাদত বন্দেগীর কথা ভুলে যায় তাই এই সময়টা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।

(তিন) এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লাগানো থাকে। অর্থাৎ সবসময় মসজিদে অবস্থানের কথা বলা হয়নি বরং এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করার প্রতি সূক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

(চার) এমন দুইজন লোক যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, তাদের ভালবাসা থাকা এবং না থাকা উভয়টাই হয় একমাত্র আল্লাহ'কে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ একজন অপরজনকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসে। আবার একজন অপরজনের উপর রাগান্বিত হয় বা ছেড়ে যায় একমাত্র আল্লাহরই জন্য।

(পাঁচ) ঐ ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চবংশীয় নারী অথবা রুপ-সৌন্দয্যের অধিকারিণী নারী যেনার দিকে আহবান করে আর সে ঐ নারীকে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। অর্থাৎ কোনো সুন্দরী নারী যেনার প্রতি উদ্ভুদ্ধ করলে সে ঐ নারীকে সাথে সাথে বলে দেয় আমি এমন গোনাহের কাজে জড়িত হতে পারবো নাহ। কারণ আমি আল্লাহ তায়া’লাকে ভয় করি।

(ছয়) ঐ ব্যক্তি যে এমনভাবে দান-সাদাকাহ করে যে, তার ডানহাত দ্বারা দান করলে বামহাত টেরই পায়না আবার বামহাত দ্বারা দান করলে ডানহাত বুঝতেই পারেনা। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যে পরিপূর্ণ ইখলাসের সহিত, লোকদেখানোর উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে শুধুমাত্র আল্লাহ'কে রাজি খুশি করার জন্য দান-সাদাকাহ করে এখানে এমন ব্যক্তিদেরকেই বুঝানো হয়েছে।

(সাত) এমন ব্যক্তি যে আল্লাহর ভয়ে নিরবে, নির্জনে একাকী হয়ে চোখের জ্বল জড়ায়। অর্থাৎ ঐসব লোক যারা একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালার ভয়ে রাতের অন্ধকারে অথবা নিরবে নিজের গোনাহের কথা স্বরণ করে করে তাওবার জন্য চোখের পানি জড়ায়।
(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে এই সাত শ্রেণির মানুষের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে এবং আমলনামায় নেক আমলের পূঁজি ভারি করে কিয়ামতের দিনের সেই ভয়াবহ ও কষ্টকর কঠিন পরিস্থিতিতে আরশের নিচে স্থান পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

আত্মার ব্যাধি ও প্রতিকার

জাতির দুঃসময়ে আলেম'রাই সর্বপ্রথম পাশে আসে।

মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর